‘পিস্তল দেয় জাহিদ, গুলি করে আবিদ’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Decrease font Enlarge font
ঢাকা: ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে যে পিস্তলটি
দিয়ে গুলি করা হয় সেটি সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন জাহিদ চৌধুরী নামের এক
ব্যক্তি। আর সেই পিস্তল দিয়ে চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি করে আবিদ
নামের আরেক ব্যক্তি। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
শনিবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে সকালে রাজধানীর বারিধারায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮
জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আবিদও রয়েছেন।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান সকালে বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তারা ঢাকায় এসে আত্মগোপন করে।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য নিয়েই সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। সংবাদ
সম্মেলনে বক্তব্য তুলে ধরেন র্যাব পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) এ
টি এম হাবিবুর রহমান।
RABতিনি জানান, এ ঘটনার পরিকল্পনা করা হয় ফেনীর সালাম জিমনেশিয়ামে। সেখানে
সিফাত, সানি, আবিদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ১৯ মে রাতে এই পরিকল্পনা করা হয়
আর ২০ মে সকালেই প্রায় ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল এ হত্যাকাণ্ডে অংশ
নেয়। এ হ্যতাকাণ্ডে মোট পাঁচটি পিস্তল ব্যবহার করা হয়।
‘এই পিস্তলগুলো সংগ্রহ করেন জাহিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি, শিপলু পিস্তল
চালানো শিখিয়ে দেয় আর উপজেলা চেয়ারম্যানকে সেই পিস্তল দিয়ে সরাসরি গুলি করে
আবিদ।”
র্যাব পরিচালক জানান, এরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ
নিয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ ছিল। উপজেলার চেয়ারম্যান
একরামকে হত্যার জন্য পরিকল্পনাকারীরা ওই দিন সকাল ৮টা থেকে শহরের বিভিন্ন
রাস্তায় অবস্থান নেন।
সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি করে নিজের বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
হত্যাকারীরা শহরে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের অবস্থান নেওয়া গ্রুপগুলোর মধ্যে
যোগাযোগ শুরু করে দেয় বলে জানান এ টি এম হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, একরামের গাড়িটি সিনেমা হলের সামনে আসলেই একটু ভিন্ন কায়দায়
নসিমন, করিমন ও টেম্পু দিয়ে পথ রোধ করা হয়। এ সময় গাড়িটি রাস্তার ডিভাইডারে
উঠে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে তারা সেখানে ব্যাপকভাবে ককটেল ফাটিয়ে
আতঙ্ক তৈরি করে। এতে লোকজন ভয়ে ও আতঙ্কে সেখান থেকে দূরে সরে যায়।
‘এ সময় একরামের গাড়িতে চালকসহ মোট ৪জন ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়িতে
থাকা একরামের নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে প্রতিরোধ করারও চেষ্টা করেন।
কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে তারা সেখান থেকে সরে যান। যেহেতু হত্যাকারীদের
টার্গেট ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান, তাই তিনি আর বের হতে পারেন নি’ বলেন
র্যাব পরিচালক।
‘গুলি করার পর সেই গাড়িটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় হত্যাকারীরা। তখনো
ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ কাছে আসতে না
পারে।’
গুলি করার সময় এ ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের কয়েকজন ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে
সতর্ক অবস্থানে ছিলেন জানিয়ে র্যাব পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায়
জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারেও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ফেনী জেলা শহরের একাডেমি এলাকায়
বিলাসী প্রেক্ষাগৃহের সামনে গুলিবর্ষণ ও ছুরিকাঘাতের পর গাড়িসহ পুড়িয়ে
হত্যা করা হয় একরামুল হককে। একরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন।