মৃত তিন যুবক - মোতালিব / কাউসার / আসাদ
নরসিংদী: দালাল চক্রের প্রলোভনে ভাগ্যের চাকা
ঘোরাতে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অনাহারে না ফেরার দেশে পাড়ি
জমিয়েছেন নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর গ্রামের হতভাগা ৪ যুবক।
গত ২২ মে বৃহস্পতিবার রাতে ওই যুবকদের এক সহযাত্রী মালয়েশিয়া থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৃতদের স্বজনদের এ খবর জানিয়েছেন।
মৃত
চার যুবক হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর গ্রামের আবু ছাইদের ছেলে
আসাদ (৩৬), মৃত আবুল কাশেমের ছেলে কাউসার (৩০), আ. বাছেদের ছেলে মহসিন
(৩৫) ও লোকমান মিয়ার ছেলে মোতালিব (৩১)।
এছাড়াও অবৈধভাবে ওই একই
জাহাজে করে মালয়েশিয়াগামী কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার আরো ২২ জন
যাত্রীর মৃত্যুর খবরও জানিয়েছেন তাদের সহযাত্রীরা।
মৃতেরা সবাই
অনাহারে ও পানি পিপাসায় দুর্বল হয়ে পড়েন। পড়ে দালাল চক্রের লোকজন তাদের পেট
কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
শনিবার সরেজমিনে নুরালাপুর গ্রামে ওই যুবকদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় প্রত্যেকের বাড়িতেই চলছে শোকের মাতম।
আসাদের
দিনমজুর বাবা ছাইদ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তার একমাত্র ছেলে আসাদ স্থানীয়
টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করত। গত ২৮ এপ্রিল হঠাৎ সে বাড়ি থেকে বের হয়ে
পরদিন ফোন করে জানায় সে ও একইগ্রামের আরো ৩ জন পার্শ্ববতী আড়াইহাজার
উপজেলার আদম বেপারী আফাজ উদ্দিন ওরফে আব্বাসের মাধ্যমে জাহাজে করে
মালয়েশিয়া যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় পৌঁছে বিস্তারিত জানাবে বলে ফোনের লাইন কেটে
দেয়।
এরপর থেকে তার সন্তান ও বাকিদের আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না বলে তিনি জানান।
স্থানীয়
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর প্রত্যেক পরিবার ২ লাখ করে আদম বেপারী
আফাজ উদ্দিনকে দেবে এমন শর্তে তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর চুক্তি হয়। এ জন্য
প্রত্যেকের পরিবারকে টাকা জোগাড় রাখতে বলা হয়। ফলে ওই ৪ যুবকের পরিবার
ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা জোগারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার
রাতে ওই জাহাজের এক যাত্রী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার আমিরুল নামে এক
যুবক থাইল্যান্ড থেকে মৃত কাউসারের ভাই রফিজ উদ্দিন মোবাইলে ফোনে ৪ জনের
মৃত্যুর খবর জানায়। মুহূর্তের মধ্যে খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে শোকের
মাতম ওঠে।
এলাকাবাসী সূত্র আরো জানায়, সদর উপজেলার মহিষাশুড়া,
কাঠালিয়া, নুরালাপুর, পাইকারচর ইউনিয়ন থেকে মাঝে-মধ্যেই অবৈধভাবে অসংখ্য
লোক মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছে। এদের সংখ্যা অন্তত ৬-৭শ হবে। তবে এ পর্যন্ত
এদের মধ্যে অন্তত ২ শতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছে।
এ ব্যাপারে দালাল আফাজ উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি যাদের মালয়েশিয়া নিচ্ছেন সবাই ভালভাবেই পৌঁছে যাবে।
নরসিংদী
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম কাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে
তিনি জানান, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে থানায় কেউ আসেনি। তাছাড়া এসব বিষয়ে তিনি
কিছু জানেন না।